Wednesday, October 21, 2015

নয়ারের কারচুপির চেষ্টা ধরা পড়ল এবার!


বল গোললাইন পেরিয়ে গিয়েছে তো কী! নয়ার এভাবেই বের করে পরে রেফারির দৃষ্টি আকর্ষঁণ করতে চেয়েছিলেন
কাশীনাথ ভট্টাচার্য

ম্যানুয়েল নয়ার এমন করেই থাকেন। পার্থক্য শুধু, অন্য দিন অন্য রেফারির হাতে পার পেয়ে যান, মঙ্গলবার রাতে আর পাননি!
দু-দু’বার বিশ্বকাপে তাঁকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঠিক যে-অর্থে দিয়েগো মারাদোনা, থিয়েরি অঁরি বা ওলিভিয়ের জিরু ভণ্ডামি করেছেন, প্রতারণা করেছেন ফুটবলের সঙ্গে, নয়ারও করেছেন। ২০১০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলায় ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের শট গোললাইনের ভেতরে পড়েছিল দু-দু’বার। নয়ার দেখেছিলেন স্পষ্ট। কিন্তু, দ্বিতীয়বারও গোললাইনের ভেতরে পড়ে বল যখন তাঁর আয়ত্তে আসে, জোরে শট করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের কাছাকাছি অঞ্চলে, অস্বাভাবিক দ্রুততায়। যাতে রেফারির মনে কোনও সন্দেহ তৈরিই না হয়! ইংল্যান্ড তখন ১-২ পিছিয়ে ছিল। ল্যাম্পার্ডের গোল মানে ২-২। তারপরেও জার্মানি জিততেই পারত, ৪-২ জিতত, কোনও অসুবিধে ছিল না তো! দল হিসেবে জার্মানরা নাকি সব সময়েই এগিয়ে থাকেন। তা-ও ইংল্যান্ডের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুধু-ভাতু দলকে হারাতেও রেফারির সাহায্য নিতে হয়েছিল। নি্যেছিলেন নয়ার। মঙ্গল রাতেও চেষ্টা করেছিলেন, হাততুলে দৃষ্টি আকর্ষণের। রেফারি অবশ্য তাঁকে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির মনে করার কোনও সঙ্গত কারণ দেখেননি, ঠিকই করেছেন!
ল্যাম্পার্ডের শট এতটাই ভেতরে পড়েছিল, একবার নয়, দুবার। নয়ার কিন্তু বলটা ধরেই শট মেরে বিপক্ষ বক্সে পাঠিয়েছিলেন!
গত বিশ্বকাপের পর চার বছর এগিয়ে আসুন। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল। এবার নয়ার হয়ে গিয়েছিলেন কিক-বক্সার! ৫৬ মিনিটে, নিজেদের বক্সের ঠিক বাইরে। লাফিয়ে ঘাড়ে উঠেছিলেন গোনজালো ইগুয়াইনের, হাঁটু দিয়ে মেরেছিলেন ইগুয়াইনের মুখে। সেই ছবিও ইন্টারনেটে সহজলভ্য। ওয়ার্ল্ড সকার পত্রিকা লিখেছিল, No excuse to ignore Neuer’s final thuggery.
লেখক পল গার্ডনার যা লিখেছিলেন, খুব সামান্য অংশ, ‘A terrible decision – the worst I have seen in a World Cup final. A decision that, … , allowed a goalkeeper to get away with actions that should have been punished.  Germany’s Manuel Neuer was the goalkeeper in question… Neuer had gone in with his right knee raised and he had jumped high enough for that battering-ram of a knee to smash into Higuain’s head.
মারাকানায় প্রেস বক্সে যেখানে বসেছিলাম সেই ফাইনালে, ঠিক সামনেই ঘটেছিল। চিৎকার করে উঠেছিলাম সেই বর্বরতায়, যা তুলনীয় ছিল একমাত্র আরও এক জার্মান গোলরক্ষক টনি শুমাখারের ক্যারাটে, ফরাসি বাতিস্ত্ঁর মুখে, ১৯৮২ বিশ্বকাপে। সেইবারও রেফারি দেখেননি। জার্মান গোলরক্ষকরা এভাবে মারলে অন্যদিকেই মুখ ঘুরিয়ে থাকেন রেফারিরা, ইতিহাস সাক্ষী। লাল কার্ড প্রাপ্য ছিল যে ফাউলে, রেফারির বাঁশি দুবারই বাজেনি, এমনকি ফাউলের সিদ্ধান্ত দিতেও। হিটলারের দেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন মুসোলিনির দেশের রেফারি!
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে নয়ারের কিক-বক্সিং!
হ্যাঁ, জার্মানরা একবার হেরেছিলেন রেফারির সিদ্ধান্তে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে, ইংল্যান্ড জোর করে হারিয়েছিল, জিওফ হার্স্টের শট গোললাইন পেরয়নি, কিন্তু, ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ওই সিদ্ধান্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিতে হলে কলজের যে-জোর লাগে, রেফারিদের সচরাচর তা থাকে না, ১৯৬৬ সালে তো আরও ছিল না! ২০১৪ বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার হুনিগা যখন পেছন থেকে নেইমারের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছিলেন, রেফারি কিন্তু আয়োজক দেশকে ফাউলও দেননি!
এ ছাড়া, প্রতিবার জার্মানদের ছাড় দিয়েছেই রেফারিরা, বিশ্বকাপে, বিশ্বের নানা প্রান্তে। ১৯৫৪য় ফেরেঙ্ক পুসকাসকে মেরে প্রতিযোগিতার বাইরে করে দেওয়ার চেষ্টা। ১৯৭৪-এ নিজেদের দেশে পূর্ব জার্মানির বিরুদ্ধে ইচ্ছে করে হেরে তুলনামূলক সহজ গ্রুপে গিয়ে সোজা ফাইনালে যাওয়া। ১৯৮২-তে আলজেরিয়াকে বের করে দেওয়ার জন্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে দৃষ্টিকটু গড়াপেটা। ১৯৯০-তে ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডকে মাঠ থেকে সরাতে বেকেনবাওয়ারের পরামর্শে রাইকার্ডের মুখে থুথু ছিটিয়ে বেরিয়ে আসা রুডি ফোলারের। ২০০৬ বিশ্বকাপ নিজেদের দেশে কীভাবে নিয়ে গিয়েছিলেন বেকেনবাওয়ার, ক্রমস উন্মোচিত হচ্ছে সত্য। তারপরও আবার বেকেনবাওয়াররা অভিযোগ জানান, রেফারির বিরুদ্ধে, হায়!

আর, ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির গোলরক্ষক যেভাবে সান্তি কাজোরলার ক্রসটা ফস্কেছিলেন, কলকাতা ময়দান তো তাঁকে বলে পাঁকাল মাছ ধরার চেষ্টা! জিরু হাত দিয়ে বল গোলে ঠেলে ঠিক করেননি। কিন্তু, ওভাবে ফস্কানো কি নয়ারের শোভা পায়?

No comments: