Friday, September 25, 2015

এলদের পোস্তিগা-র নামমাহাত্ম্য!



কলকাতায় প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে এলদের পোস্তিগা


কাশীনাথ ভট্টাচার্য

নাম নিয়ে নয়, নামের উচ্চারণ নিয়ে ‘কনফিউশন’ দূর করে ফেলা যাক, শুরুতেই!
‘Helder Postiga’ যাঁর নাম, কেন তাঁকে ‘এলদের পোস্তিগা’ লিখছি? সহজবোধ্য, সহজপাচ্যও। বোঝার জন্য ‘রকেট সায়েন্টিস্ট’ হওয়ার দরকারও নেই। ভদ্রলোক পর্তুগিজ, ইংরেজ নন। আমরা আবার ইংরেজি আয়নায় উচ্চারণ প্রতিফলিত করাই ‘রাইট অ্যাঙ্গেলে’! তাই ‘হেল্ডার’। অথচ, যাঁরা ‘হেল্ডার’ বলেন তাঁরাই আবার ‘পোস্তিগা’-ও বলেন! যদি ‘হেল্ডার’ বলেন, ‘পোস্টিগা’ বলুন, মানতে অসুবিধে নেই। তখন দুটি শব্দই উচ্চারিত হবে ইংরেজি কায়দায়, বেশ দাঁত চিবিয়ে, মুখ বেঁকিয়ে, ‘হেল্ডার পোস্টিগা’। ঠিক যেমন করে, আমি-ইংরেজি-জানি বোঝাতে, ওই ভয়াবহ ‘অ্যাটলেটিকো ম্যাড্রিড’ বা ‘ডিয়েগো ম্যারাডোনা’ উচ্চারিত হয়, হোক তেমন। সেই ‘ম্যাডনেস’-এর একটা যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব, ‘ইংলিশ উইন্ডো’ খুলে রাখার। কিন্তু, ‘অ্যাটলেটিকো’ বলব, ‘আতলেতিকো’ কিছুতেই বলব না, সঙ্গে আবার ‘মাদ্রিদ’-ও বলব - চলতে পারে না এমন। ‘অ্যাটলেটিকো ম্যাড্রিড’-ই বলুন, না হলে বলুন ‘আতলেতিকো মাদ্রিদ’।
ইংরেজি ‘Helder’ বাংলায় ‘এলদের’ হচ্ছেন, কারণ, শুরুর ওই ‘এইচ’ পর্তুগিজে উচ্চারণহীন। যাঁরা ইংরেজি বোঝেন তাঁদের ভাষায় ‘সাইলেন্ট’। ইংরেজি ‘hour’ উচ্চারণ করতে গিয়ে বাংলায় ‘আওয়ার’ বলা বা লেখা হয়, ‘হাওয়ার’ নিশ্চয়ই নয়, তাই না? সেই ভাবেই ‘হেল্ডার’ হল ‘এল্ডার’। এবার, পর্তুগিজ শব্দ উচ্চারণের রীতি, যেখানে সব অক্ষরই উচ্চারণে নরম বা ‘সফ্ট’। অর্থাৎ, ‘ট’ নয় ‘ত’, ‘ড’ নয় ‘দ’। তাই ‘এল্ডার’ নয়, এলদার’। থুড়ি, ‘এলদের’। ইংরেজির ‘elder’ শব্দটির বাংলা উচ্চারণ আমরা ‘এল্ডার’ করি, কিন্তু পর্তুগিজে ‘ই’ উচ্চারণে ‘এ’, কখনও ‘আ’ নয়। তাই, ‘এলদের’। আর ‘পোস্টিগা’ কখনও নয়, ‘পোস্তিগা’। দয়া করে তাঁর নামের একটা ভাগ ইংরেজিতে ‘হেল্ডার’ আর একটা ভাগ পর্তুগিজে ‘পোস্তিগা’, উচ্চারণ করবেন না, বা লিখবেনও না, প্লিজ! সাধু-চলিত যেমন একসঙ্গে চলে না, ইংরেজি-পর্তুগিজও না। যে কোনও এক দিক মেনে চলাই ঠিক।
বাংলা প্রবাদে দু-নৌকোয় পা দিতে বারণ করে দেওয়া আছে। আমরা ঠিক সেটাই করি, বিদেশি ফুটবলারদের নাম উচ্চারণের ক্ষেত্রে। ক্রিস্তিয়ানো/ক্রিশ্চিয়ানো বলি, আবার ‘রোনাল্ডো’। হাস্যকর! অট্টহাস্যকরও বলাই যায়! ‘রোনাল্ডো’ বলতে চাইলে ‘ক্রিস্টিয়ানো’ বলুন না, কে বারণ করল? এমনকি ‘রোনালদো’ লিখলে তা নিয়ে মাতব্বরদের হাসাহাসিও প্রচলিত বাংলা বাজারে! এই অদ্ভুতুড়ে উচ্চারণ বিভ্রাট আসলে কোনও কিছুই না জেনে হামবড়া ‘ইংরেজ’ হওয়ার চেষ্টা। বাংলা কাগজে বিদেশি ফুটবলারদের নাম সম্পর্কিত উচ্চারণ এবং বানান-বৈচিত্র্য থেকে মুক্তি ঘটানোর একটাই উপায় - হয় পুরোটা ইংরেজি উচ্চারণ চলুক, অথবা, ঠিকঠাক উচ্চারণ। দোআঁশলা কখনও নয়, প্লিজ!

তা ছাড়া, ‘শিক্ষিত’ হতে চাইলে উপায়ও এখন হাতের কাছেই তো। ইন্টারনেট আছে, গুগল-বাবা আছেন। গুগল সার্চ-এ ‘Helder Postiga pronounciation’ লিখে ‘এন্টার’, অনেক কিছু পাবেন। যে কোনও একটি লিংক-এ গিয়ে পর্তুগিজ বা ব্রাজিলীয় পর্তুগিজ উচ্চারণটা শুনে নিন। আর কোনও ‘কনফিউশন’ থাকবে না দেখবেন! আর হ্যাঁ, ‘ট’-এর ওপর বিরাট জোর দিয়ে ‘পোর্টুগিজ’ উচ্চারণটাও বন্ধ যদি করতে পারেন আতলেতিকো কলকাতার কর্তারা, মঞ্চে বসে, একটু বেশিই খুশি হবেন বোধহয় এলদের পোস্তিগাও!

*** যা যা বললেন পোস্তিগা, কলকাতায় প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে ---

* রোনালদো না মেসি?
- দুজনেই গ্রেট। সংখ্যাগুলোও জবরদস্ত। কি্ন্তু বেছে নিতে হলে ক্রিস্তিয়ানোকেই। হার হলেও পর্তুগিজ তো!
* মোরিনিও?
- অন্যতম সেরা কোচ, ওঁর হাতেই উত্থান। গত এক দশক ধরে দেখিয়ে দিয়েছেন কেন ওঁকে অন্যতম সেরা বলা হয়।
* প্রথম মরশুমে গার্সিয়ার পারফরম্যান্সের তুলনা
- হ্যাঁ, চ্যাম্পিয়ন করেছিল দলকে। সফল তো নিশ্চয়ই। এবার আমাদের পালা। দেখা যাক, ওর মতোই ভাল করতে পারি কিনা। চাইব তো আরও ভাল করতে!
* ফিগো না রোনালদো?
- দুজনেই মহান। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে বোধহয় রোনালদো খানিকটা এগিয়ে।
* ছোটবেলার আদর্শ?
- মার্কো ফন বাস্তেন।

No comments: