Monday, October 12, 2015

২ পেলে-বিতর্ক!

কাশীনাথ ভট্টাচার্য
বাউরুর লিগে ছোট পেলের প্রথম পরিচয়পত্র

পেলের জন্ম কবে?
সবাই তো জানেন, ২৩ অক্টোবর। সবজান্তা উইকিপিডিয়াও তো তাই-ই বলছে। তা হলে হঠাৎ প্রশ্ন কেন?
আসলে, প্রশ্নের উৎস সানতোস (Santos) ক্লাবের জাদুঘরে দেখা একটি ছবি। পেলে সই করেছিলেন সানতোস-এ, বাউরুর লিগে নথিভুক্ত হ্ওয়ায় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল তাঁকে, ১৯৫৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর । সেখানে জুনিয়র ফুটবলার হিসেবে নথিভুক্ত পেলের জন্মতারিখ জ্বলজ্বল করছে – ২১ অক্টোবর, ১৯৪০।
পেলের প্রথম পাসপোর্ট
অতঃপর, সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে পেয়েছিলাম হাতের কাছেই। পেলের আত্মজীবনী ‘Pele, The Autobiography’-র ১৪ পাতায় (Simon & Schuster UK Ltd, 2006 Edition)। পেলে যেখানে দুই সহলেখক ওরলানদো দুয়ার্তে ও আলেক্স বেয়োস-কে জানিয়েছিলেন, ‘গণ্ডগোল তো আমার বার্থ সার্টিফিকেটেই। লেখা আছে ২১ অক্টোবর। কী করে হয়েছিল, জানা নেই। হয়ত ব্রাজিলে আমরা নিখুঁত হতে ততটা আগ্রহী নই বলেই। ব্যাপারটা ওখানেই শেষ নয়। আমার পাসপোর্টে এখনও ওই ২১ অক্টোবরই লেখা আছে। কতবার তারপর পাসপোর্ট পাল্টালাম। প্রতিবারই বলি, জন্মতারিখটা ঠিক করে দিতে। এখনও পাল্টানো যায়নি!’
স্মৃতিধর নই। কিছুই মনে থাকে না প্রায়। যখন পড়েছিলাম, অদ্ভুত লেগেছিল। মনে রাখাও উচিত ছিল। কিন্তু, থাকেনি। পরে সানতোসের জাদুঘরে জন্মতারিখটা দেখে খটকা লাগায় আর একবার বইয়ের পাতা উল্টে স্বস্তি।
দ্বিতীয় খটকার সমাধানও ছিল ওই একই পাতায়। অনেক জায়গায় এখনও এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো-কে ‘এদিসন’ ডাকা হয়। পেলে বারবারই বলেন, তিনি ‘এদিসন’ নন, ‘এদসন’। ত্রোস কোরাকোস, পেলের জন্ম যেখানে, সেই গ্রামে পেলে পৌঁছনর কিছু দিন আগেই এসেছিল বিদ্যুৎ। আমরা সবাই জানি টমাস আলভা এডিসনের কথা। গ্রামে বিদ্যুৎ এসে যাওয়ায় এতটাই খুশি হয়েছিলেন পেলের বাবা হোয়াও রামোস দো নাসিমেন্তো ওরফে দোনদিনিও যে, ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘এদসন’। বাড়তি ‘আই’-এর উপস্থিতি ছিল না নামে, পেলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ওই একই পাতায়। কিন্তু, পেলের বিরক্তি এখনও যায়নি। বহু সরকারি নথিতে এখনও ‘আই’ উপস্থিত। ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারের নিজের কথায়, ‘সরকারি বা ব্যক্তিগত নথিতে এখনও কী করছে ওই বাড়তি ‘আই’-টা, আর ভাল লাগে না লোককে বলতে।’

আমাদের ভারতে যেমন, ব্রাজিলেও বোধহয় সরকারি নথিতে নাম-জন্মতারিখ পাল্টানো প্রচুর ঝামেলা। না হলে, নাম আর জন্মতারিখ নিয়ে এমন সমস্যা থেকেই যায়, তা-ও আবার পেলের, গত প্রায়-পঁচাত্তর বছরে!
 আত্মজীবনীর সেই পাতা

No comments: