Friday, May 27, 2016

গোল্লাছুট ১১



Wednesday, May 4, 2016

রিজোলির মতো দুঃখপ্রকাশ করবেন কি সাকিরও?




কাশীনাথ ভট্টাচার্য

ইতালীয় রেফারি নিকোলা রিজোলি সম্প্রতি দুঃখপ্রকাশ করেছেন উয়েফার কাছে, বার্সেলোনার কাছেও। বার্সেলোনা-আতলেতিকো কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় পর্বের ৯৩ মিনিটে তিনি আতলেতিকোর গাবির বিরুদ্ধে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেননি বলে। ‘আসলে, গাবির পা ছিল বক্সের বাইরে। সেই জন্যই ভুলটা হয়ত, বলেছিলেন। ওই সময় পেনাল্টি পেলেই বার্সেলোনা গোল করত এবং খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়াত, এই নিশ্চয়তা কেউ কখনও দিতে পারেনি, পারবেও না। কিন্তু, ভুল ভুলই। এবং তাতে সুবিধে হয়েছিল আতলেতিকোর!

তুরস্কের রেফারি কুনেইত সাকিরও কি তেমন করবেন? প্রশ্ন উঠছে, কারণ, আতলেতিকো যে-গোলের কারণে ফাইনালে পৌঁছল, গ্রিজমানের সেই গুরুত্বপূর্ণ গোল এল যখন, গ্রিজমান অফসাইডে ছিলেন, তোরেসের পা থেকে পাস বেরনোর সময়! ইউরোপীয় ফুটবলের নকআউট ম্যাচে এমন সিদ্ধান্ত বারবারই তুল্যমূল্য ম্যাচের ফয়সালা করে দেয়। এবারও করল। এই সাকিরই ছিলেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেই ম্যাচেও যখন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড দুর্দান্ত খেলছিল রেয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে। কিন্তু, একেবারেই বিনা কারণে নানিকে লাল কার্ড দেখিয়ে মোরিনিওর রেয়ালের হাতে ম্যাচটা থালায সাজিয়ে তুলে দিয়েছিলেন সাকির। এবার, আতলেতিকো ১-২ হারল বায়ার্নের কাছে। নিজেদের মাঠে জিতেছিল ১-০। ফলে, দুপর্ব মিলিয়ে ২-২। কিন্তু, গ্রিজমানের ওই ‘অ্যাওয়ে’ গোল বদলে দিল সমীকরণ। উয়েফার নিয়মে, দুপর্ব মিলিয়ে গোল সমান-সমান হলে ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচের এক গোলকে দু-গোল ধরা হবে। তাই, আতলেতিকো পৌঁছল ফাইনালে, বায়ার্নকে নিতে হল বিদায়। আর, অস্বস্তিকর হলেও সত্যি, পরপর দুটো নকআউট ম্যাচে, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, দুটো সিদ্ধান্তই গেল আতলেতিকোর পক্ষে!

পেপ গারদিওলাকে আবার তাড়া করল ন্যু কাম্পের ভূত! ২০১২ সালে পরিস্থিতি ছিল এমনই। চেলসির কাছে প্রথম পর্বে ০-১ পিছিয়ে নিজেদের মাঠে খেলতে নেমেছিল বার্সেলোনা। প্রথমার্ধেই দু-গোলে এগিয়ে যায়। তারপর, প্রতি আক্রমণে রামিরেজের ‘অ্যাওয়ে’ গোল, চেলসিকে যা এনে দিয়েছিল জিয়নকাঠি। অন্তত আরও একটি গোলের সন্ধানে মরিয়া বার্সেলোনা দ্বিতীয়ার্ধে দুরন্ত। পেনাল্টি পায়। কিন্তু, লিওনেল মেসি সেই পেনাল্টি মেরেছিলেন বারে! এবারও বায়ার্ন পেনাল্টি পেয়েছিল। বায়ার্নে সাধারণত পেনাল্টি মারেন টমাস মুলার। তিনিই এগোলেন, ২-০ করার লক্ষ্যে। কিন্তু, মুলারও সহজ শট নিলেন, চাপের মুখে। জান ওবলাক, আতলেতিকোর গোলরক্ষক, বাঁচালেন সহজেই। বায়ার্ন পিছিয়ে পড়ল ওই মুহূর্ত থেকেই। এখানেই মিল শেষ নয়। ২০১২য় শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ২-২ করেছিলেন তোরেস। সেই তোরেসই এবারও সুযোগ পেয়েছিলেন ২-২ করার যখন বায়ার্নের বিরুদ্ধে ভুল পেনাল্টি দেওয়া হয়েছিল। জাভি মার্তিনেজ ফাউল করেছিলেন বক্সের বাইরে, তোরেস লাফিয়ে এসে লুটিয়ে পড়েছিলেন বক্সের ভেতরে। কিন্তু ৮৫ মিনিটের সেই পেনাল্টি নুয়াররের দিকেই মেরে জয় সুনিশ্চিত করার সুযোগ নষ্ট করেন তোরেসও।

৯০ মিনিট জুড়ে তিন গোল, দুটি পেনাল্টি, দুটিই নষ্ট, রেফারির কিছু ভুল সিদ্ধান্ত – ইউরোপের সেরা প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে সব নাটকই ছিল। এক দল খেলা গড়তে চেষ্টা করল, অন্যদল চাইল ভাঙতে। ম্যাচের চাপ এতটাই যে, দুই কোচই গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়লেন। প্রথমার্ধে তো একবার রিবেরি এসে সিমিওনে-কে ধরে ফেললেন, আটকাতে! আর সিমিওনে শেষে নিজের দলের সহকারী ম্যানেজারের হাতে চড়ই মেরে ফেললেন, অত্যন্ত দৃষ্টিকটু যা। তবে, নিজের দলের সহকারী ম্যানেজারের গায়ে হাত দিলে শাস্তি কী হবে নিয়ে উয়েফার নিয়ম পরিষ্কার নয়। তাই, সিমিওনের শাস্তি হবে কিনা, উয়েফা জানাবে। হলে, ফাইনালে মাঠে থাকতে পারবেন না, আতলেতিকোর কাছে যা অভিশাপ হতে পারে।

গারদিওলার বায়ার্ন তিন বছরে তিনবারই বিদায় নিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে, স্পেনের তিনটি দলের কাছে হেরে – যথাক্রমে রেয়াল, বার্সেলোনা ও আতলেতিকো। বায়ার্নকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হল না। ‘চেষ্টা করেছিলাম সর্বস্ব দিয়েই। ফুটবলাররাও দুর্দান্ত খেলেছে। কিন্তু, পারেনি শেষ পর্যন্ত। হতাশ, তবে ওদের পারফরম্যান্সে গর্বিতও। আতলেতিকোকে অভিনন্দন।’ আর সিমিওনে খুশি, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা তিন দলের দুটিকে পরপর দুটি নকআউট ম্যাচে হারিয়ে। ‘পরপর দুটো নকআউট ম্যাচে বার্সেলোনা ও বায়ার্নের বিরুদ্ধে জয়, ভাবতেই যেন কেমন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। তবে, এটা আমাদের ফুটবলারদের দায়বদ্ধতার জয়। মাঠে নিজেদের সবটুকু দিয়েছে। দলটা ক্রমশ এক হয়ে উঠেছে, ওদের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’



তিন বছরে দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। ২৮ মে ফাইনালের আগে আপাতত এই মধুর সময়টা উপভোগ করতে চান সিমিওনে!